ঘাসান কানাফানি- মেন ইন দ্য সান | অনুবাদ: মাসুমুল আলম

ঘাসান কানাফানি- মেন ইন দ্য সান | অনুবাদ: মাসুমুল আলম

 

ঘাসান কানাফানির জন্ম ৯ এপ্রিল, ১৯৩৬ উত্তরাঞ্চলীয় ফিলিস্তিনের এক্রি নামক স্থানে, অধুনা যা আক্কা নামে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৪৮-এ ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হলে ফিলিস্তিন স্বাধীনতা হারায়। সেই ভূ-খণ্ড হারানো বিপর্যয়ে লাখো লাখো ফিলিস্তিনের সঙ্গে ঘাসান কানাফানির পরিবারও শরণার্থী হয়ে পড়ে।

১৯৬৯ সালে বৈরুত ঘেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'আল-হাদাফ' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন  ঘাসান কানাফানি। এছাড়া, ১৯৭০-এ তিনি 'পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন '-এর প্রধান মুখপাত্র ছিলেন।অতি অল্প বয়সে বিপুল খ্যাতি অর্জনকারী কানাফানির উপন্যাস-ছোটোগল্প-নাটক এ পর্যন্ত মোট ১৬ টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭২ সালের ৮ জুলাই বৈরুতে একটা মার্কেটের সামনে ইসরাইলি এজেন্টরা তাঁর গাড়িতে টাইমবোমার বিস্ফোরণ ঘটালে তিনি নিহত হন।

বিমূঢ়, হতচেতনকারী 'মেন ইন দ্য সান' উপন্যাসের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি লেখক ঘাসান কানাফানি আরববিশ্বে সর্বাগ্রগণ্য সাহিত্যিক হিশেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন অনেক আগেই। ভাগ্যান্বেষী, রাষ্ট্রহীন ক'জন ফিলিস্তিনি নিরাপদ নিশ্চিন্ত জীবনের খোঁজে আগস্ট মাসের ভয়াল সূর্যের নিচে তপ্ত মরুভূমির মধ্য দিয়ে অনিশ্চিত যাত্রা শুরু করে। কিন্তু স্বপ্নভূমিতে পৌঁছানোর আগেই রাত্রির মরুভূমির ভাগাড়ে তাদের জায়গা হয়। একটা সীমান্ত ফাঁড়িতে উত্তপ্ত ধাতব ট্যাঙ্কের মধ্যে তাদের নি:শব্দ মর্মন্তুদ মৃত্যু ঘটে অথচ জগতের সঙ্গে সম্বন্ধহীন 'তুচ্ছ' সেই মৃত্যুর মহত্তম উচ্চারণে, পাঠক, ঘাসান কানাফানির অসাধারণ গদ্যশৈলীর  বিষম বেদনানুভূতিতে আক্রান্ত হন।

'মেন ইন দ্য সান' শুধু আরব-মনীষাকেই ধারণ করেনি, একইসঙ্গে, এটা আরব-উপন্যাসের ব্যাপক সংখ্যক সসমালোচকেরও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ভাবীকালের আশা-সঞ্চারী 'নিপীড়িতদের সাহিত্য' তকমাধারী নয়, বরং অতীত ও বর্তমানের ঘটনা-সংঘটনের মেলবন্ধন, নিস্পৃহ রূঢ় বাস্তবতা 'মেন ইন দ্য সান'-এর আখ্যানকে অধিকতর মর্মস্পর্শী করেছে। উপন্যাসটি যখন লেখা হয়,ঐ সময়ে কানাফানি একজন 'দেশহীন' মানুষ হিশেবে বৈধ কাগজপত্রের অভাবে লেবাননে 'পলাতক' জীবন-যাপন করছিলেন।

আজ অবধি ফিলিস্তিন ভূ-খণ্ডে যখন ইহুদি দখলদারিত্ব অব্যাহত রয়েছে, নৃশংস রক্তপাত এবং ফিলিস্তিনের বাস্তবতাকে ইসরাইল নিরন্তর অমানবিক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে, তখন ঘাসান কানাফানির গল্পসমূহ উত্তর-প্রজন্মের কাছে অধিকতর প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আর এই দখলদারিত্বের বিপরীতে চলমান ফিলিস্তিনি 'প্রতিরোধ আন্দোলন ' কানাফানির সাহিত্যকীর্তি ছাড়াও তাঁর সাক্ষাৎকার থেকেও বিপ্লবের শক্তি, সাহস ও চিন্তার রসদ পেয়ে আসছে।
                    **
মাসুমুল আলমের জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৭৫, যশোর।
১৯৯৪ সাল থেকে ছোটোকাগজ 'প্রতিশিল্প'-এ গল্প লেখার মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যযাত্রা শুরু। গত ৩০ বছরে ৪টি উপন্যাসসহ প্রকাশিত হয়েছে ১১টি বই। বিভিন্ন ছোটোকাগজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নোর্বার্তো ফুয়েন্তেস, এর্নান্দো তেলেজ, হোসে অগাস্তিন, অক্টাভিও পাজ, গার্সিয়া মার্কেস, আলেক্স লা গুমা, জাকারিয়া তামের, ওসামা আলোমারসহ নানা সাহিত্যিকের অনূদিত গল্প। তিনি পুরোনো বইপত্রের একজন সংগ্রাহক।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ