বইকথা – বই নিয়ে কথা বলার নতুন পত্রিকা : দময়ন্তী দাশগুপ্ত

বইকথা – বই নিয়ে কথা বলার নতুন পত্রিকা : দময়ন্তি দাশগুপ্ত


বই নিয়ে আস্ত একটি পত্রিকা ‘বইকথা’-র সঙ্গে আমার পরিচয় প্রথম সংখ্যা থেকেই। ‘বইকথা’-র এক সহযোগী সম্পাদক মহাশ্বেতা যখন আমায় জানায় যে ‘আমাদিগের ভ্রমণবৃত্তান্ত’-এর আলোচনা বেরোচ্ছে প্রথম সংখ্যাতেই, লিখছে ও নিজেই। ‘বইকথা’-র প্রথম সংখ্যা যখন হাতে এল বই বাছাই এবং লেখার মান দেখে আমি মুগ্ধ। ‘আমাদিগের ভ্রমণবৃত্তান্ত’ নিয়ে আলোচনাটি নিয়ে তো বটেই। দ্বিতীয় সংখ্যাতেই সুযোগ এল একটি দারুণ বই দীপ্তনীল রায়ের ‘নেটিভ কেতাব নস্টালজিয়া এবং হ্যাসট্যাগে বিস্মৃত অন্যান্য বঙ্গজ শব্দেরা’ আলোচনা করার। তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যার পর পঞ্চম সংখ্যায় আবার আলোচনা করলাম একটি অনুবাদ বই নিয়ে – ‘আসাম আন্দোলনের গল্প’ সম্পাদনা সঞ্জীব পল ডেকা, অনুবাদ নন্দিতা ভট্টাচার্য। আর এই লিখতে লিখতেই ক্রমশ সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছি ‘বইকথা’ পরিবারের সঙ্গে। তাই আর এক সহযোগী সম্পাদক তৃষ্ণা যখন বলল বইকথা-র সাম্প্রতিক সংখ্যাটি নিয়ে ফেসবুকে দু-চার কথা লিখতে, তখন খাতা-কলম থুড়ি ল্যাপটপ নিয়ে বসেই পড়লাম।

 প্রথমেই বলে রাখি ফেসবুক একটি পূর্ণাঙ্গ পত্রিকার আলোচনার জায়গা নয় মোটেও। তাই বাছাই কয়েকটি লেখার কথাই বলব। আরও একটা কারণে বাছাই লেখার কথা বলব তা হল সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করার যোগ্য ব্যক্তি আমি নইও।


বইয়ের শুরুতেই সম্পাদকীয়তে ‘বইকথা’ করার কারণ আর তার বাধাবিঘ্নের স্বরূপটি নিয়ে লিখেছেন সম্পাদক অনিতা অগ্নিহোত্রী। সত্যিই এরকম বই নিয়ে আলোচনার একটি পরিসর খুব জরুরি ছিল। যেখানে লেখক, আলোচক সকলেই সেই পরিবারের অংশ হয়ে ওঠেন, হয়তোবা পাঠকও।

সদ্য প্রয়াত কবি দেবারতি মিত্রকে নিয়ে তৃষ্ণা বসাকের স্মরণিকাটি মন ছুঁয়ে যায়। তৃষ্ণার কলমের জাদুতে দেবারতি মিত্রের কবিতার আয়নায় মিশে যায় স্তানিস্লো  লেমের উপন্যাস ‘সোলারিস’-এর কাহিনি অথবা সেই কাহিনি অবলম্বনে  আন্দ্রেই তারকোভস্কির চলচ্চিত্রটি।

রাহুল পুরকায়স্থ-র কোনও কবিতার বই আমি পড়িনি। ‘বইকথা’-র মজাই হল এটা যে নতুন নতুন বই সম্বন্ধে আগ্রহের সৃষ্টি করে। অনিতা অগ্নিহোত্রীর আলোচনায় চিনতে থাকি রাহুল পুরকায়স্থের কবিতাগুলি। অন্তরঙ্গ পাঠে অনিতা অগ্নিহোত্রী হাতে ধরে পড়ান অপূর্ব সব কবিতা। শুধু কবিতাগুলি কীভাবে পড়তে হবে নয়, কীভাবে পড়তে নেই তাও সযত্নে দেখিয়ে দেন তিনি। রাহুলের কবিতাকে চিনতে গেলে, বুঝতে গেলে এই পাঠ অত্যন্ত জরুরি।

হিরন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়ের রচিত ‘কমলকুমার মজুমদার জীবন ও সাহিত্য’কে কমলকুমারের ‘প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আলোচক দেবাশিস তরফদার, যে কমলকুমারকে হিরন্ময় দেখেননি এবং যে জীবনী তিনি তিরিশ বছরের অতুল পরিশ্রমে নির্মাণ করেছেন। একটি জীবনী লেখার ব্যক্তিগত লড়াই আর পরিশ্রমের কথা মনে করিয়ে দিলেন দেবাশিস তরফদার। এখানেই যেন লেখক-আলোচক উভয়ের সঙ্গে অনেকটা একাত্মতা বোধ করলাম। দেবাশিস তরফদারের লেখা থেকে অল্প কথায় হিরন্ময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কাজের বিপুল গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। তিনি লিখছেন, কমলকুমার ছিলেন শেষ রেনেসাঁস ব্যক্তিত্ব, যাঁর বিচরণ ছিল শিল্পের প্রতিটি শাখায়। আর সেই প্রতিটি দিকের নিখুঁত ছবিটি আঁকতে কার কাছেই না গেছেন হিরন্ময় –কমলকুমারের আত্মীয়, বন্ধু, সহকর্মী, ছাত্র। অনেকে অবাক হয়েছেন, কেউবা সাহায্য করেছেন। হিরন্ময়ের বইটিকে ‘অবশ্য পাঠ্য’ বলেছেন দেবাশিস তরফদার, তার বড় কারণ হল পাওয়া তথ্যকে তিনি চোখ বুজে বিশ্বাস না করে যাচাই করে নিয়েছেন পদে পদে। সবমিলিয়ে আলোচনাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

মানুষ অনেকখানি ছেলেমানুষ, তাকে রূপকথা দিয়ে ভোলাতে হয় –এমন চমৎকার কথা যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন তা দিয়েই অহনা বিশ্বাসের ‘চুপকথা রূপকথা’ বইয়ের আলোচনা শুরু করেছে মহাশ্বেতা রায়। রূপকথা আসলে যে বড়দেরই গল্প, তাকে মাজাঘষা করে ছোটদের পাতে দেওয়া হয় সেকথা আবারও মনে করিয়ে দেয় মহাশ্বেতা। আর চেনা ছকের বাইরের বড়দের সেই রূপকথার গল্পই লিখেছেন অহনা, যাকে নতুন করে আমাদের চেনায় মহাশ্বেতার পাঠ।

গোপা দত্ত ভৌমিকের স্মৃতিকথা ‘রোদ্দুরের গন্ধ’ পড়তে গিয়ে প্রথমেই বড় সুন্দরভাবে স্মৃতিকথা লেখার নির্যাসটি ধরে ফেলেন আলোচক অঞ্জলি দাশ। কোভিড চলাকালীন ঘরবন্দী জীবনে পুরোনো স্মৃতির ঝাঁপি খুলে তাঁর জীবনে লগ্ন থাকা কয়েকজন নারীর কথা তুলে ধরেছেন গোপা। আলগোছে বলা সেসব কাহিনির বুনোটকে অঞ্জলি তাঁর কলমের চালনায় আমাদের গভীরে প্রোথিত করেন। আগ্রহ হয় বইটির পাতা উলটিয়ে সেইসব স্মৃতির কাছে গিয়ে গল্পের ওম নিতে।

পাতা উলটিয়ে অল্প কয়েকজন আলোচকের কথাই লিখলাম, বাদ পড়ে গেল অজস্র ভালো আলোচনা আর ভালো বইয়ের কথা। সে তোলা থাক আগ্রহী পাঠকের জন্যই।

মতামত:_

3 মন্তব্যসমূহ

  1. বাংলাদেশেও একটা বইকথা নামের পত্রিকা আছে।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হ্যাঁ, বাংলাদেশের পত্রিকাটি নিয়ে আলোচনা পড়ুন এখানে

      মুছুন

মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম