ট্রামক্যাচারে আটকে মৃত্যুবরণ করা প্রথম এবং শেষ মানব। জীবনের নানা পাকচক্র যাকে সবুজ ঘাস জোনাকির দেশ বরিশাল থেকে টেনে এনে ফেলেছে কলকাতার বিষাক্ত ট্রাম লাইনের ওপর। সে ইঙ্গিত অবশ্য কবিতায় আগেই দিয়ে রেখেছেন। প্রথম প্রেমিকা শোভনার প্রেম-কটাক্ষ, স্ত্রী লাবণ্য প্রভার সাথে বিবাহ, সাংসারিক টানাপোড়েন কিংবা অমীমাংসিত রহস্যময়ী নাটোরের বনলতা সেন! মাতা কুসুমকুমারী দাসের অনুপ্রেরণায় লেখালেখির সূচনা। অতঃপর সমসাময়িক লেখক-সমালোচকদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ। জীবনানন্দের কবিতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল সহ সেকালের সাহিত্যক এবং সমালোচকদের নানামুখী প্রতিক্রিয়া। ব্যক্তিগত জীবনের সাথে লেখক জীবনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ -সবকিছুই এক মলাটে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন শাহাদুজ্জামান তার "একজন কমলালেবু" বইটিতে।
শাহাদুজ্জামান পেশাগত জীবনে একজন চিকিৎসক। লেখাপড়া করেছেন চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানে। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণও করেছেন। একজন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবেই যার সর্বাধিক পরিচিতি। চলচ্চিত্রের বহুল পরিচিত সেই ফ্লাশব্যাক আর চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানের মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের প্রয়োগে তিনি দারুণ সূচনা করেছেন 'বিকালের রোদে রক্তাপ্লুত ট্রাম' শিরোনামে। ফ্লাসব্যাকে নিবিড় ভাবে তুলে এনেছেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নির্জনতম কবির মহাপ্রয়াণের দৃশ্য। প্রশ্ন রেখেছেন,
এটা কি একটা দুর্ঘটনা? নাকি তিনি ট্রামের চাকার নিচে আত্মহত্যা করেছেন? অথবা এটা কি আসলে একটা হত্যাকাণ্ড, যার পেছনে রয়েছে আরও অনেকের অদৃশ্য হাত?
এই অমিমাংসীত রহস্যের গন্ধ পাঠককে টেনে নিয়ে যাবে শেষ পৃষ্ঠা অবধি।
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
-কুসুমকুমারী রচিত বিখ্যাত এই পংক্তিমালার সাথে ছোটবেলায় আমরা মোটামুটি সকলেই পরিচিত হয়েছি। এই সাহিত্যানুরাগী কুসুমকুমারী আর নিষ্ঠাবান শিক্ষক সত্যানন্দের প্রথম সন্তান জীবনানন্দ। যার ডাকনাম মিলু। ভোরে বিছানায় শুয়ে মায়ের প্রার্থনা গান আর বাবা সত্যানন্দের উপনিষদের আবৃত্তি শুনে যার ঘুম ভাঙত। স্কুলের সিলেবাসবন্দী পড়াশোনায় হতাশ ছিলেন কুসুমকুমারী। বাবা সত্যানন্দও চাইতেন শুধু স্কুলের পরীক্ষায় পাস না, ছেলে ভাবতে শিখুক। ফলে খুব ছোটবেলায় সাহিত্যর বীজ অঙ্কুরিত হয় ছোট্ট মিলুর ভাবনার জগতে। তার জন্য আলাদা পড়ার ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। আর ওই ঘরে বন্ধুদের নিয়ে বসতে শুরু করল সাহিত্যসভা। কাব্য, প্রজ্ঞা, রূপকথা, ঘাস, ফুল, পাখি মিলিয়ে মূর্ত-বিমূর্ত পৃথিবীর এক মায়াবী শৈশব-কৈশোর জীবনানন্দের। মায়ের সেই পংক্তিমালাই হয়তো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। সারাজীবন মুখচোরা হিসেবে কাটিয়ে দিলেও অলক্ষ্যে কাজ বলতে লেখাকেই বুঝেছেন। একাগ্রচিত্তে আর ধ্যানমগ্নতায় যে কাজ তিনি মাকে করতে দেখেছেন পরবর্তীতে সেটাই হয়ে উঠছে তার জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে তাড়না তাকে প্রবলভাবে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। জগৎ সংসারে আর অন্য কিছুই তাকে লেখনীর মত করে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। যার প্রমাণ মেলে -জীবনানন্দ যেদিন মারা গেলেন, সেদিন তার মরদেহ দেখতে সমসাময়িক অনেক লেখক-কবি এসেছিলেন। শবযাত্রা শুরু হবার আগে ল্যান্সডাউন রোডের সেই বাড়ির এক কোণায় দাঁড়িয়ে স্ত্রী লাবণ্য, ভাই ভূমেন্দ্রকে বলেছিলেন,
তোমার দাদা তাহলে বাংলা সাহিত্যের জন্য অনেক কিছু রেখে গেলেন, আমার জন্য কী রেখে গেলেন বলো তো?
মোক্ষম প্রশ্ন। জীবনানন্দ বাস্তবিক লাবণ্য আর তাঁর পরিবারের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেননি, ওই কিছু ধূসর পাণ্ডুলিপি ছাড়া।
মৃত্যুর পর জীবনানন্দের রেখে যাওয়া অতি মামুলি বিষয়সম্পত্তিগুলোর মধ্যে ছিলো গোটা কয়েক কালো টিনের ট্রাঙ্ক। কে জানত এই তুতেনখামের পিরামিডের গুপ্তধনের মতো ওইসব ট্রাঙ্ক থেকে উদ্ধার হবে রাশি রাশি পান্ডুলিপি। যাতে লুকিয়ে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। নানা ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে যা এখন সংরক্ষিত আছে কলকাতার আর্কাইভে। লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় জীবনানন্দের এই অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির কথা বলতে গিয়ে লিখেছিলেন,
৬০ বছর কেবল পাতাগুলো হলুদ হয়েছে এবং ন্যাপথলিন ছাড়া কোনো কার্যকর কীটনাশক না থাকা সত্ত্বেও পোকারা তা কাটতে সাহস পায়নি।
পরবর্তীতে এই পাণ্ডুলিপিগুলোর ওপর ম্যাগনিফাইং গ্লাস লাগিয়ে ভূমেন্দ্র গুহ আমাদের সামনে তুলে আনেন এক নতুন জীবনানন্দকে। প্রকাশিত-অপ্রকাশিত লেখা যোগ করলে দেখা যাচ্ছে তিনি লিখেছেন প্রায় আড়াই হাজার কবিতা, গোটা বিশেক উপন্যাস, শতাধিক গল্প, পঞ্চাশটির ওপর প্রবন্ধ আর প্রায় চার হাজার পৃষ্ঠার ডায়েরি। যাকে তিনি বলেছেন 'লিটেরারি নোটস'।
তার কবিতাকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'চিত্ররূপময় কবিতা'
জীবনানন্দের জীবনকাল যদি আমরা বিশ্লেষণ করতে যাই তাহলে দেখতে পারবো বাংলা সাহিত্যের এক সমৃদ্ধ সময়কাল। এই গ্রন্থেও রয়েছে সমসাময়িক লেখক-সাহিত্যিকদের সরব উপস্থিতি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বিদ্রোহী কবি নজরুল, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, ভূমেন্দ্র গুহ, অচিন্তকুমার কে নেই এ গ্রন্থে? তারা কেউ কেউ জীবনানন্দের জীবনে বন্ধু অথবা শত্রু হিসেবে দেখা দিয়েছেন, কখনো হয়েছেন সমব্যথী, কখনো প্রতিযোগী, আবার কখনো কঠোর সমালোচক কিংবা সাহায্যকারী। প্রথম প্রকাশিত বই দুটি রবীন্দ্রনাথের আলোচনা প্রত্যাশা করে পাঠিয়েছিলেন জীবনানন্দ। সেই চিঠি এবং ফিরতি চিঠিগুলো থেকে সহজেই অনুমান করা যায় সে সময়কার সাহিত্যবোদ্ধাদের অবস্থান। জীবদ্দশায় জীবনানন্দ যথাযথ খ্যাতি তো দুরে থাক, বরং অধিকাংশ সময়েই বারংবার কঠোর সমালোচনার স্বীকার হয়েছেন। 'কালি ও কলম' পত্রিকায় তো একজন সমালোচক 'পাহাড়িয়া কবি শ্রীযুক্ত জীবনানন্দ দাশ' সম্মোধন করে এক বিরূপ সমালোচনা প্রকাশ করেন। তবে নিজের লেখা নিয়ে জীবনান্দের ভরসা ছিলো বরাবরই ষোল আনা। জীবনের সাথে আনন্দ যোগে নাম হলেও বাস্তবিক অর্থে যে জীবনে যোগের বদলে আনন্দ বিয়োগ ছিলো সেকথা অকপটে বলা যায়। ব্যক্তিগত, সাংসারিক এবং পারিবারিক জীবন কখনোই সুখকর ছিলো না। কর্মজীবনেও একই হাল। খন্ডকালীন শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা করলেও কোথাও খুব বেশীদিন টিকতে পারেননি। বেকার জীবনের অর্থকষ্টের ছাপে সংসার জীবনেও চরম অশান্তিতে ভুগতে হয়েছে। স্ত্রী লাবণ্যের সাথে খুব একটা বনিবনাও ছিলো না। মৃত্যুর পরে পাওয়া ডায়েরিতে তাঁর জীবনের উত্থান-পতন, ভালো-মন্দ, এমনকি বেশ্যাগমন, স্বমেহন, কিংবা কাব্যহিংসার মত অতি ব্যক্তিগত তথ্য, প্রেম-বিষাদসহ তার জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা কিছুই বাদ পড়েনি কমলালেবুর আলোচনায়। 'ক্যাম্প' কবিতায় তিনি লিখেছেন,
এক ঘাইহরিণীর ডাক শুনি—
কাহারে সে ডাকে!
- এই ঘাই হরিণী নামক টোপ তাহলে কোনটা? শোভনার প্রেম, লাবণ্যের রূপ নাকি কবিতা আর সাহিত্য সৃষ্টির ইচ্ছা? -প্রশ্ন থেকেই যায়।
জীবনান্দের পাঠক-পাঠিকাদের সব থেকে বেশি কৌতূহলী চরিত্র হলো 'বনলতা সেন'। সে রহস্য অবশ্য আজও অমীমাংসিত। তবে জানা গেছে অশোক মিত্রকে জীবনানন্দ বলেছিলেন,
বনলতা সেন নামে রাজশাহী জেলে আটক এক রাজবন্দীর খবর পত্রিকায় পড়ে নামটির ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিলেন তিনি।
আকবর আলী খান চরিত্রটি সম্পর্কে একটি কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। তার মতে 'বনলতা সেন' একজন গণিকা। আর গণিকারাই তো পুরুষকে দুদণ্ড শান্তি দেয়। আবার 'আট বছর আগের একদিন' কবিতায় যেন ধাঁধা তৈরি করেছেন তিনি।
কবিতা সম্পর্কে জীবনানন্দের মতামত,
আশা-নিরাশার দোলাচলে চলা সত্তার গভীরতম দ্বন্দ্বকে ধারণ করতে চাওয়াই কবিতার আরাধ্য।
গল্পের প্লট সম্পর্কে তিনি ডাইরিতে লিখেছেন,
জীবনটাই তো প্লটবিহীন, কেবল ষড়যন্ত্রকারীরাই প্লট করে।
অনেক আগে অচিন্ত্য তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'ঈশ্বর মানেন?' জীবনানন্দ বলেছিলেন, 'মানুষের নীতিবোধ মানি।'
বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশকে 'নির্জনতম কবি' এবং অন্নদাশঙ্কর রায় 'শুদ্ধতম কবি' বলে আখ্যায়িত করেন। তার কবিতাকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'চিত্ররূপময় কবিতা'। আর শাহাদুজ্জামান তাকে 'কমলালেবু' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি সঞ্জয়ের কাছে একটি কমলালেবু খাবার আবদার করেছিলেন। আবার কবিতায়ও লিখেছেন,
একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে
-তার ইচ্ছাকে হয়তো সম্মান জানিয়েই শাহাদুজ্জামান তাকে 'কমলালেবু' উপাধি দিয়েছেন।
সাহিত্যে মোটামুটি পরিচিতি পেয়ে যাবার পর এমন বিশাল লেখালেখিগুলো লুকিয়ে রাখার মত ঘটনা বাংলা সাহিত্যে নেই। বিশ্বসাহিত্যে আছে কি? কাফকা তার বন্ধুকে বলেছিলেন তাঁর অপ্রকাশিত লেখা পুড়িয়ে ফেলতে। জীবনানন্দের তেমন ইচ্ছে ছিলো না। তিনি গল্প-উপন্যাসের পান্ডুলিপিগুলো সযত্নে রেখে দিয়েছেন ট্রাঙ্কে। কবিতা ছাপলেন, গল্প-উপন্যাস ছাপলেন না কেন? সমসাময়িক লেখক সাহিত্যকরা তার লেখার বাক-বদল ধরতে না পারলেও যে পরবর্তী প্রজন্ম মূল্যায়ন করবে সে দৃঢ়চেতা আত্মবিশ্বাস তার বরাবরই ছিলো। তিনি সেই প্রজন্মের জন্যই লিখতেন। হয়তো সে বিশ্বাসের ওপর ভর করেই পান্ডুলিপিগুলো যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছিলেন।
শেষ জীবনে নানা সংগ্রামে জীবনানন্দের জীবনীশক্তি যখন যখন প্রায় নিঃশেষিত এই সময়ে একে একে নতুন চাকরি, পুরষ্কার এবং প্রসংশা আসতে শুরু করে। কিন্তু এসব তার মনে তেমন কোন অনুরণন আনে না। এসব তখন তার কাছে 'ওই আরকি!' কবিতায় লিখেছেন,
মানুষটা মরে গেলে যদি তাকে ঔষধের শিশি
কেউ দেয় - বিনি দামে -তবে কার লাভ -।
জীবনের অতৃপ্তি তো অনেক আগেই তার কলমে উঠে এসেছে,
যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের - মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা।
শেষ জীবনে কিছুটা মূল্যায়িত হওয়া শুরু করলেও মৃত্যুর পরেই তিনি ক্রমান্বয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করেন। তার সেই আত্মবিশ্বাস সত্যিতে রূপান্তরিত হয়।
পাঠ শেষ করেও 'একজন কমলালেবু' বইটি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এটি আসলে কি একটি উপন্যাস, নাকি একটি জীবনকাহিনী, নাকি একটি ক্রিটিকাল বিশ্লেষণী? শাহাদুজ্জামানের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি তার রচনাকে সাহিত্যের নির্দিষ্ট কোন ছকে বাঁধতে চান না। এ ক্ষেত্রে তিনি সফল। জীবনানন্দ যেমন নীরবে একটি নির্দিষ্ট কবিতা লেখার ধরন ভেঙে নতুনত্বের ডাক দিয়েছিলো শাহাদুজ্জামানও তেমনি প্রথা ভেঙে এক নতুন ধাচের সাহিত্যকর্ম সৃষ্টির যে প্রয়াস দেখিয়েছেন সেজন্য তিনি অবশ্যই প্রশংসা পাবার যোগ্য। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায়, ‘একজন কমলালেবু’ একটি গবেষণামূলক লেখনী যা বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
**********
একজন কমলালেবু
শাহাদুজ্জামান
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ: ফাল্গুন ১৪২৩, ফেব্রুয়ারি ২০১৭
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: সব্যসাচী হাজরা
মূদ্রিত মূল্য: ৫০০ টাকা
ISBN: 978 984 91403 7 2
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম