সৌমেন দেবনাথ রচিত পত্রসাহিত্য "কালো গোঁসাইয়ের চিঠি"- চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন | মোঃ তুষার উদ্দিন

সৌমেন দেবনাথ রচিত পত্রসাহিত্য "কালো গোঁসাইয়ের চিঠি" বইয়ের প্রচ্ছদ


খামের ভেতর এক টুকরো চিঠি, তাতে কত স্বপ্ন বন্দি। চিঠি সোনালী স্মৃতির অংশ যা বর্তমানে ব্যাকরণ বইয়ের একটি অধ্যায় মাত্র। চিঠির ভেতর থাকতো মিষ্টি কথামালা আর ফুলের পাপড়ি, ছড়িয়ে দিতো মিষ্টি সুবাস। প্রেমিকার চিঠি প্রেমিকের বুক পকেটে থাকতো, বারবার পড়তো, চিঠির সুগন্ধ নিতো; ছুঁয়ে যেত প্রেমিকার মনকে। ডাকপিয়ন হাঁক ছাড়তো চিঠি নিতে, কিংবা এসে দরজায় ঠক ঠক করতো। হলুদ খামের চিঠি হাতে নিতেই তা খুলে দেখার ও পড়ার এক অজানা চাপা উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা বিরাজ করতো। চিঠির কাগজে থাকতো টাটকা গন্ধ। সে অনুভূতি বড়ো ব্যাখ্যাতীত। চিঠি দিনের সেই অসাধারণ অনুভূতিগুলো এখন বিলুপ্ত। চিঠির সাথে মিশে থাকা আবেগ-অনুভূতি বর্তমান প্রজন্মের মানুষ জানেই না। অনুভূতির বিবর্তনে মৌলিক অনুভূতির জায়গাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রযুক্তির দৌরাত্ম্যে এখন চিঠির জন্য পথ পানে চেয়ে থাকতে হয় না। অপেক্ষার যন্ত্রণা থেকে প্রযুক্তি ছুটি দিয়েছে, কিন্তু চিঠির গোটা গোটা অক্ষরগুলো ছুঁয়ে দেখলে যে অনুভূতি জাগ্রত হতো তা এখনও বিরল। চিঠি হারিয়ে গিয়েছে, কিন্তু চিঠির সাথে যুক্ত অনুভূতিগুলো কখনোই হারিয়ে যাবে না। প্রযুক্তি দুনিয়াতে থেকেও একান্ত আবেগ থেকে স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখতে কলম ধরে কিন্তু চিঠি লেখায় যায়। কিছু কথা যা সামনে থেকে বলা যায় না, চিঠি লিখে জানিয়ে দেওয়া যায়। চাইলেই লেখা যায় একান্ত মনের কিছু কথা বা অবান্তর কথা বন্ধুকে বা কাছের কাউকে; চমকে দেওয়া যায় ফুরিয়ে যাওয়া বা বিলুপ্ত অসাধারণ অনুভূতি লিখে। এমন অন্তর্জালের দুনিয়াতেও প্রিয় মানুষের হঠাৎ পিলে চমকে যাক একটা চমৎকার চিঠি হাতে পেয়ে। হোক না একটু চিঠির বিপ্লব। মান করেছিলো যে বন্ধুটি, ফেসবুকের স্ক্রলিংয়ে সে বন্ধুটি সামনে আসে; কিন্তু বলা হয় না তাকে কিছু, হোক প্রথম চিঠিটিই তার নামে প্রেরণ। জাগবেই জাগবে সেই পুরাতন অনুভূতি। প্রিয় মানুষ অবন্তীর জন্য চিঠি লিখেছেন সৌমেন দেবনাথ। প্রতিটি চিঠিই মধুময় কথাতে পরিপূর্ণ। একই শব্দের পুনর্বার ব্যবহারে লেখা চিঠিগুলো পড়তে বেশ সুখকর লাগে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে মানুষ কষ্ট করে চিঠি লিখবে না, কিন্তু সৌমেন দেবনাথ প্রিয়জনের কাছে মনের মাধুর্যতা মিশিয়ে চিঠি লিখেছেন। কারণ আবেগ প্রকাশে চিঠির কোনো জুড়ি নেই। চিঠি লেখার মধ্যে বিশেষ সৃজনশীলতা থাকে। মনের আবেগ, হাসি, কান্না, ক্রোধ, প্রেম ইত্যাদি নানা মানবীয় অনুভূতিকে কাগজের টুকরোয় সুন্দরভাবে, শৈল্পিকরূপে তুলে ধরার আশ্চর্য এক শক্তি আছে সৌমেন দেবনাথের কলমে। চিঠিগুলোতে প্রণয়াবেগের আতিশয্য এতটাই লোভনীয় যে পড়তে শুরু করলে শেষ না করে রাখা যায় না। প্রেম ও চিঠির সম্পর্ক একে অন্যের সমার্থক এই প্রযুক্তির যুগেও, প্রেমের প্রসঙ্গ এলে অবধারিতভাবে আসে চিঠির প্রসঙ্গ। প্রিয় মানুষের হাতের স্পর্শ মাখানো অশ্রুজলে বা সুখাগুনে দাগাঙ্কিত চিঠি পরম আরাধ্য বিষয়, বহু প্রতীক্ষার পরে পাওয়া চিঠিতে যে হৃদয়ের স্পন্দন থাকে তা অন্তরে একটুখানি হলেও স্বস্তির প্রলেপ দেয়।

কালো গোঁসাইয়ের চিঠি❞ পত্রসাহিত্যটির ফ্ল্যাপ লিখেছেন মোঃ বিরুন আল রশিদ। তাঁর ফ্ল্যাপটিও চিঠিকেন্দ্রিক একটি অনন্য রচনা। ফ্ল্যাপের লেখাটি-

এই সেদিনও ব্যক্তির আত্মপ্রকাশের দর্পণ ছিলো চিঠি। চিঠি ছিলো মানবসভ্যতার মঙ্গলদূত কিংবা চিন্তাচর্চার জিয়নকাঠি। চিঠি ছিলো শিল্পসত্তার পরিচয়ে উদ্ভাসিত, যেটির ভাষা ছিলো ভাবরসে সিক্ত; থাকতো তাতে হৃদয়াবেগের প্রগাঢ় প্রকাশ। আর আজ প্রযুক্তিস্রোতে অবিরাম স্ক্রলিংয়ের ব্যতিব্যস্তে পড়াশোনা হয়ে গিয়েছে দেখাশোনা, লেখালেখি হয়ে গিয়েছে দেখাদেখি, ভাবনা হয়ে উঠেছে দূরভাবনা। চিঠি ছিলো প্রিয়তমা, বাবা-মা, বন্ধুদের তথ্যধারক বার্তাবাহক। প্রেরকের প্রেমরসের চিঠি প্রাপকের আবেগ-অনুভূতিকে ছুঁয়ে যেত। কল্পনার আধিপত্য, মননের প্রগাঢ়তা ও সৃষ্টিপ্রাচুর্যের শিল্পিত বিচিত্র ক্ষণ থাকতো চিঠিতে। কবে আসবে ডাকপিয়ন হাঁক ছেড়ে সেই উত্তেজনায় ও অপেক্ষায় প্রহর কাটতো না। খাম খুলে চিঠি বের করার আগ পর্যন্ত এক অজানা চাপা ভাবাবেগ, উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা কাজ করতো; সে আজ ব্যাখ্যাতীত। চিঠি খোলার সেই অজানা চাপা অনুভূতির পুনরাবৃত্তি আর হবে না। চিঠিপত্র, খাম, ডাকটিকিট সংগ্রহ করা ছিলো নান্দনিক শখ। মানুষের আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা ও সুখ-দুঃখ থাকতো চিঠির পাতা জুড়ে, এ ভাবনা আজ অতীত। মানুষ ভুলতে বসেছে চিঠির কথা। মরিচা ধরেছে লালরঙা ডাকবাক্সে। চিঠির কালো অক্ষর পড়ে চোখ ভিজেছে কত প্রেয়সীর! হলুদাভ খামের ভেতর নীলাভ, সবুজাভ অথবা গোলাপি রঙের কাগজে মন ভোলানো প্রেমালাপ থাকতো। আজ নেই সেই পত্রমিতালি, নেই পত্রমিতা। আজ ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল ইত্যাদি অন্তর্জালের দুনিয়ায় কলমিবন্ধু শব্দটিই নেই। ডাকপিয়নের ডাক আর শোনা যায় না পথে পথে। প্রযুক্তিআশ্রিত হৃদয়ে আগের সেই গাঢ় অনুভূতি নেই, প্রেমপত্র বিলুপ্ত। যা দুই একটি চিঠি ডাক অফিসে খামভর্তি পড়ে থাকে তার ষোলো আনাই দাপ্তরিক। চিঠি-পত্র, পত্রসাহিত্য সবই আজ পরাভবের মুখে। অথচ এই প্রযুক্তিযুগেও সৌমেন দেবনাথ অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে চিঠি লিখেছেন তাঁর কাছের মানুষ অবন্তীকে। তাঁর আঙুলের মিহি সেলাইয়ে বয়ানের যে বুনন তা স্বকীয়তায় ভাস্বর। বুদ্ধিবৃত্তি ও অনুভবকে কাজে লাগিয়ে চিঠিজনিত স্মৃতিকে সবার সামনে এনেছেন তিনি ❝কালো গোঁসাইয়ের চিঠি❞ পত্রসাহিত্যের মাধ্যমে। পত্রসাহিত্যটি পাঠান্তে হৃদয় ভারাকুল হয়ে চলে গিয়েছিলো আশি-নব্বইয়ের দশকে। পাঠকও পত্রসাহিত্যটি পড়ে বিহ্বলিত হবেন বলে আশা রাখি।



ফ্ল্যাপটি পড়ে মন ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিলো। আঙুলের মিহি সেলাইয়ে বোনা নকশিকাঁথার মতো চিঠিও মানব হৃদয়ের ভাবাবেগ আর স্মৃতিকাতরতার স্মারক। হৃদয়ের ভারহীন কথামালা চিঠির পাতাতে লিখে যেমন প্রস্বস্তি পাওয়া যায়, মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করে সেই প্রশান্তি মেলে না। তথ্যপ্রযুক্তির প্রভূত উন্নয়নে বিস্মৃত কোনো তালিকাতে চিঠির অবস্থান চলে গেলেও হাতে লেখা চিঠির অক্ষরগুলো স্পর্শ করে পড়তে পড়তে আঙুলের নিচে অদৃশ্য সুরের যে মূর্ছনা অনুভূত হতো তা মোবাইল ফোনের সাদাভ, নীলাভ বা কালো পর্দার টেক্সে আর অনুভূত হবে না। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বা ই-মেইলে সাবধানে বাছাই করে বাক্য রচনা নেই, নেই সেই আবেগপূর্ণ অনুরণন বা ভাষার শৈল্পিকতা। সমস্ত রেখে সৌমেন দেবনাথ কলমের ছোঁয়ায় একের পর এক শব্দ সাজিয়ে আবেগের নকশিকাঁথা গেঁথেছেন ❝কালো গোঁসাইয়ের চিঠি❞ পত্রসাহিত্যে। হস্তলিখিত শিল্পকর্মের মধ্যে গেঁথে থাকা অনুরণনকে ভুলে না গিয়ে তিনি চিঠি লিখেছেন প্রিয় মানসী অবন্তীকে। এবার একটি একটি করে চিঠি পড়বো আর চিঠিতে থাকা ভাব নিয়ে কিছু লিখবো।

সস্তা মায়ায় ভুলে যেও না শিরোনামে লেখা চিঠিতে সস্তা বিষয়টি নিয়ে লেখা। সমাজ-সংসারে সস্তা হয়ে থাকলে সস্তা হয়ে যেতে হয়। সস্তা হয়ে থাকলে সমাজে গুরুত্বহীন হয়ে পড়তে হয়। এই সস্তা না হয়ে থাকার জন্য অবন্তীর শুভানুধ্যায়ী অবন্তীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন। লিখেছেন,

সবচেয়ে সস্তা রূপ, সবচেয়ে দামি গুণ। সস্তার পিছে ছোটে সবাই, সস্তার শুভাকাঙ্ক্ষী বেশি।


বিশ্বাস ভাঙার শব্দ হয় না শিরোনামে লেখা চিঠিতে বিশ্বাস-অবিশ্বাস, বিশ্বাসভঙ্গ, বিশ্বাসহীনতা, বিশ্বাসহানীর মতো বিষয় অবন্তীর শুভাকাঙ্ক্ষী অবন্তীকে লিখে জানিয়েছেন। লিখেছেন,

বিশ্বাস শক্তিশালী অস্ত্র। বিশ্বাস ছাড়া সম্পর্ক মূল্যহীন। বিশ্বাসের ঘরে কখনোই আগুন হুটহাট লাগে না।


সুচিন্তার সুবাতাসেই সফলতা আসে শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর প্রীতিধন্য অবন্তীকে লিখেছেন চিন্তা, দুশ্চিন্তা, সুচিন্তা, প্রয়োজনীয় চিন্তা বা অতিরিক্ত চিন্তার মতো বিষয় নিয়ে। লিখেছেন,

সুচিন্তাতেই সফলতা। সুচিন্তক মানুষের সান্নিধ্যে থাকলে চিন্তাতে বৈচিত্র্য যোগ হবে। অতিরিক্ত চিন্তা কখনো শুভ ফল দান করে না।



মুখের রুচির জন্য অরুচিকর কাজ নয় শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর হিতৈষী অবন্তীকে লিখেছেন মানুষের রুচি, অরুচি, রুচিকর, রুচিহীন, রুচিশীল, অরুচিশীল বিষয় নিয়ে। লিখেছেন,

রুটি-রুজি-রুচির জন্যই আমরা কর্ম করি, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের কাজ-কর্ম রুচিকর রাখি না। রুচিকর পোশাক-আশাকের জন্য অরুচিকর কাজ করতেও আমাদের রুচি লাগে।


আপন হয় পর, পর হয় আপন শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী অবন্তীকে লিখেছেন আপন মানুষের সাথে আপন মানুষের মনোক্ষুণ্ণতা, দ্বন্দ্ব, বিবাদ, সম্পর্কচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, ঐক্য, অনৈক্য নিয়ে। লিখেছেন,

পর মানুষ আপন মানুষের চেয়ে উপকার করে বেশি। তাই বলে পর মানুষকে আপন মানুষের উপরে স্থান দিতে নেই।


মানুষের অমত প্রকাশ সহজাত বিষয় শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর হিতাকাঙ্ক্ষী অবন্তীকে লিখেছেন মত, অমত, দ্বিমত, ভিন্নমত, মতৈক্য, মতানৈক্য, মতান্তর, মতভেদ, মতদ্বন্দ্ব নিয়ে। লিখেছেন,

যুক্তি থাকলে অন্যের মতের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ বাঞ্ছনীয়। অন্যের অভিমত নিজের মতের সাথে না মিললে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।


প্রতিটি মায়াময় মুহূর্ত অমূল্য শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর হিতার্থী অবন্তীকে লিখেছেন মায়া নিয়ে, মায়ার শক্তি নিয়ে, মায়ার হৃদয় নিয়ে, মায়াচ্ছন্নতা নিয়ে, মায়াহীনতা নিয়ে, মায়াময়তা নিয়ে। লিখেছেন,

মায়ার কারণে মানুষ আটকে থাকে। মায়াচ্ছন্ন হৃদয় কখনোই মনের মানুষকে কষ্ট দেয় না। যে হৃদয়ে মায়া থাকে না, সেই হৃদয় হৃদয় না। মায়াহীন হৃদয় ঊষর।


মিথ্যা অভিনয় সবসময় প্রবঞ্চনা নয় শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর কল্যাণকামী অবন্তীকে লিখেছেন পরস্পর পরস্পরের সাথে অভিনয় করে বেঁচে থাকার বিষয়টি নিয়ে, যেখানে সমাজের প্রতিটি চরিত্র প্রতিটি চরিত্রের সাথে মিথ্যা অভিনয় করে বেঁচে থাকে। লিখেছেন,

যে যত সুন্দর অভিনয় করছে, সে তত ভালো থাকতে পারছে। অভিনয় না জানা মানুষও নিজেরই অজান্তে অভিনয় করছে।


ভুল থেকে হয় মহাভুল ও শিক্ষা শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর মঙ্গলকামী অবন্তীকে লিখেছেন ভুল নিয়ে, ভুলের শিক্ষা নিয়ে, ভুলের মহীরুহ নিয়ে, ভুল চিন্তা নিয়ে, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ও ভুলের শুদ্ধতা নিয়ে। লিখেছেন,

যে ভুল করে না, সে শেখে না। যে ভুল করে না, সে হয় কাজই করে না, না হয় ঐশ্বরিক।


ভালো থাকার জন্য চেষ্টা করতে হয় না শিরোনামে অবন্তীর হিতকামনাকারী অবন্তীকে লিখেছেন সঠিক ভাবনায় থাকতে, নেতিবাচক চিন্তা না করতে, হতাশাকে প্রশ্রয় না দিতে, ধৈর্যহীন না হতে, নিজের মন্দ গুণ দমন করতে। লিখেছেন,

আত্মতৃপ্তি যত বাড়বে ভালো থাকা তত বাড়বে। পছন্দের কাজে মনোনিবেশ করলে ভালো থাকবে। ভালো থাকার চেয়ে ভালো হওয়া জরুরি। ভালো হলে ভালো থাকা সহজ। আশার স্তর কমালে ভালো থাকা সম্ভব।


ছোটোগল্প ছোটো নয়, বিশালতার ধারক শিরোনামে অবন্তীর সফলতাকামী অবন্তীকে লিখেছেন ছোটোগল্পের ধরন-ধারণ নিয়ে, ছোটোগল্পের আকার-কলেবর নিয়ে, ছোটগল্পের কথনভঙ্গি, প্রকাশভঙ্গি নিয়ে। লিখেছেন,

ছোটোগল্পের ভাষা যেমন ঋজু, মেদহীন ও লক্ষ্যভেদী; তেমনি বাক্যবিন্যাসও হয় কৌতূহলোদ্দীপক। ভাব, ভাষা, আঙ্গিকে থাকে নতুনত্ব; বাক্যে থাকে চমক, ঘটনায় থাকে চমক, চরিত্রে থাকে চমক।


অনায়াসলব্ধে জয়োচ্ছ্বাস থাকে না শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর জয়াকাঙ্ক্ষী অবন্তীকে লিখেছেন জয়-পরাজয় নিয়ে, জয়োচ্ছ্বাস নিয়ে, জয়োল্লাস নিয়ে, জয়েচ্ছা নিয়ে। লিখেছেন,

জয়ের জন্য প্রত্যেকে কাতর, কিন্তু জয়ের জন্য পরিশ্রম, ত্যাগ আর অপেক্ষা লাগে। জয়ের জন্য মরিয়া প্রত্যকে, কিন্তু জয় মানেই জীবন নয়। জয় মানেই শেষ কথা নয়।


শয়তানের রূপ সবসময় ভালো শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর শুভার্থী অবন্তীকে লিখেছেন মানুষের ভেতরে-বাইরের রূপ নিয়ে, কুরূপ নিয়ে, আচার-আচরণ নিয়ে, শ্রী-সৌন্দর্য নিয়ে। লিখেছেন,

রূপ সুন্দর মানেই সর্বাংশে সুন্দর না। রূপ সুন্দর, ব্যবহার অসুন্দর; মূলত কুরূপ। রূপ ভালো, আচরণ মন্দ; মূলত কুরূপ।


বৃষ্টির চেয়ে দৃষ্টিতে ভেজা মিষ্টি শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর গুণমুগ্ধ অবন্তীকে লিখেছেন বৃষ্টির সৌন্দর্য নিয়ে, বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ নিয়ে, বৃষ্টির দিনের একাকিত্ব নিয়ে, বৃষ্টির দিনের কামনা-বাসনা নিয়ে। লিখেছেন,

যে বৃষ্টির জল মাতিয়ে রাখতো, সেই বৃষ্টির জল বিষাদময় গান শোনায়। বৃষ্টি বিন্দুর মিষ্টি শব্দ অনুচ্চারিত শব্দ হয়ে কাঁদায় আমায়।


সুখের কোনো ঠিকানা নেই শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর প্রীতিমুগ্ধ অবন্তীকে লিখেছেন সীমিত পেয়েও কীভাবে সুখে থাকা যায়, সুখের প্রকৃত সংজ্ঞা, সুখের তালাশ কীভাবে করতে হবে, প্রকৃত সুখের ঠিকানা নিয়ে। লিখেছেন,

সুখী মনেই সুখ, আত্মতুষ্ট মনে সুখ, নির্লোভ মনে সুখ। সুখ বাজারে বিক্রয় হয় না, কেনার বিষয়ও নয়। সুখের জন্য লড়াই করলে সুখ মেলে না।


যত্ন জানা হাতের স্পর্শ পরশসমান শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর আশীর্বাদিক অবন্তীকে লিখেছেন যত্ন জানা হাতের কোমল স্পর্শের কথা, যত্নে মোড়া হৃদয়ের কথা; অযত্ন-অবহেলায় সম্পর্ক নষ্টের কথা, যত্নশীল আত্মার কথা। লিখেছেন,

যত্ন করতে জানে যারা নিঃস্বার্থ ভালোবাসাও পায় তারা। যত্ন পাওয়ার অধিকার যাদের, তাদের যত্ন না করলে পরে ক্ষতিই হয়। যত্ন পাওয়ার মানুষদের যত্ন করলে সম্পর্কের বুনট শক্ত হয়।


দুশ্চিন্তা অসুস্থতাকে দীর্ঘায়িত করে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর শুশ্রূষাকামী অবন্তীকে সুস্থ থাকার উপায় সম্বন্ধে লিখেছেন, সুস্থ থাকার গুরুত্ব সম্বন্ধে লিখেছেন, প্রফুল্ল চিত্তের মাহাত্ম্য নিয়ে লিখেছেন। লিখেছেন,

আত্মবিশ্বাস থাকলে অসুস্থতা কাবু করতে পারে না। আত্মবিশ্বাস থাকলে অসুস্থতা পরাজিত করতে পারে না। দুঃখভরা মনে অসুস্থতা বাসা বাঁধে, অসুস্থ চিন্তা অসুস্থতা জিইয়ে রাখে।


কাজের পরে কাজ, তারপরেও কাজ শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর অভিন্নহৃদয় অবন্তীকে কাজ নিয়ে লিখেছেন, একনিষ্ঠ মনে কাজ করার কথা বলেছেন, বাকবহুল না হয়ে বাকবিচক্ষণ হতে বলেছেন। লিখেছেন,

যারা কাজ করে না, তারাই কাজে ভুল খুঁজে বেড়ায়। কাজ করার ক্ষমতা সবার নেই, কাজ করার সুযোগ পেলে কাজ করে যাও।


তুমি থাকো কাছে কাছে, ছুঁয়ে ছুঁয়ে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রীতিস্নিগ্ধ অবন্তীকে লিখেছেন অতীত সুসময়ের কথা, লিখেছেন অতীতের মধুময় মুহূর্ত ও দিনবিলাসের কথা। লিখেছেন,

তুমি থাকতে আমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে, থাকতে পাশে পাশে, থাকতে কাছে কাছে। কাছে কাছে রাখতে। হাসতে হাসতে হাসাতে।


অঢেল সমস্যার সমস্যায় নাভিশ্বাস শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর রূপমুগ্ধ অবন্তীকে লিখেছেন সমস্যাময় জীবনের কথা, সমস্যা থেকে উত্তরণের কথা, সমস্যার মধ্যে জীবন যাপনের কথা। লিখেছেন,

জীবনে সমস্যা আসবে, জীবন জুড়ে সমস্যা দাপাদাপি করবে, সমস্যার মধ্যে ডুবে থাকতে হবে। তাই বলে সমস্যার কাছে হার মানা যাবে না।


হেরে যাওয়া মানে ব্যর্থতা নয় শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর শুভাশীর্বাদিক অবন্তীকে লিখেছেন হেরে যাওয়া মানে লজ্জা নয়, হার মানে বিফলতা নয়, হার মানে হতাশা নয়। লিখেছেন,

পরিশ্রম করেও তুমি হেরে যেতে পারো, আবার পরিশ্রম না করেও জিততে পারো। তাই হেরে যাওয়া মানে ব্যর্থতা নয়, নয় কোনো হতাশা।


বর্তমানের বিলাসিতা ভবিষ্যতের বিপদ শিরোনামে লেখা অবন্তীর সৌভাগ্যকামী অবন্তীকে লিখেছেন সোনার গহনার প্রতি নিরাসক্ত হতে, সোনার গহনায় সৌন্দর্য বাড়লেও বিপদও ডাকে। লিখেছেন,

যে-কোনো সম্পদের চেয়ে সোনা লুট করা সহজ। সোনার গহনা কখনোই কানের, গলার, হাতের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় না; বরং নাকের, কানের, হাতের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


তুমি নেই, আমার জগৎই নেই শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর শুভকামী অবন্তীকে লিখেছেন প্রিয় মানুষকে ঘিরে ভুল বোঝাবুঝি, প্রিয় মানুষকে দেখার আকুতি নিয়ে। লিখেছেন,

আমার ভেতরে সত্যই আমি নেই, আমি নেই আমাতে, আকাশ আমার নয় সুনীল। আমি চোখে মনোরম কিছু দেখি না, কারণ তোমার চোখে আমার চোখ নেই।


কেউ নাই নাই-এ থাকতে চায় না শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রেমমুগ্ধ অবন্তীকে লিখেছেন জীবনে কেউ দুঃখ-কষ্টে বাঁচতে চায় না, কিন্তু দুঃখ-হতাশ জীবন থেকে যাবেও না। লিখেছেন,

দুঃখে থাকতে কেউ চায় না। কষ্টে থাকতে কেউ চায় না। সুখে থাকতে চায় সবাই, অভাবহীন থাকতে চায় সবাই। কেউ অশান্তিতে থাকতে চায় না।


মেনে নিলে জেতা সহজ, টিকে থাকাও শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর চিরসাথি অবন্তীকে লিখেছেন সমাজ-জীবনে সব পরিস্থিতি মেনে নিতে জানলে জীবন চলা সহজ হয়ে যায়। লিখেছেন,

নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারছো না, মেনে নাও। নিজের মতো চলতে পারছো না, মেনে নাও। নিজের শখ মিটছে না, মেনে নাও। কেউ ঠকে না, মেনে নিলে।


দেখেও না দেখে ঘুমানো সর্বনাশের শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রিয়তম অবন্তীকে লিখেছেন ঘুমের গুরুত্ব নিয়ে, নির্ঘুমের অসুবিধা নিয়ে, ঘুমিয়ে থেকে ঘটে যাওয়া সম্মুখের অন্যায় না দেখা নিয়ে। লিখেছেন,

অন্যের বিপদে ঘুমিয়ে থাকলে সমাজ ঠাঁই দেবে না। নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে মানুষ অন্যায় দেখেও না দেখার ভান করে ঘুমায়।


চোখের তারায় রাখতে জানো শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর মনমনোহর অবন্তীকে লিখেছেন কাছের মানুষকে কাছের করে রাখতে জানার, চোখে চোখে রাখতে জানার, স্বপ্ন রচনা করতে জানার বিষয়ে। লিখেছেন,

সবাইকে বিশ্বাস করা মানুষ সবাইকে বিশ্বাস করতে জানে, সবাইকে বিশ্বাসে ধরে রাখতে জানে।


যে বলবে ভালো তাকে বলবে ভালো শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর সুজনবন্ধু অবন্তীকে লিখেছেন মানুষের ভালো করতে গেলে খারাপ হয়ে যেতে হয়, সান্ত্বনা দিতে গেলে বঞ্চনা পেতে হয় এমন বিষয় নিয়ে। লিখেছেন,

যত ভালো রাখতে চাইবে তত খারাপ হয়ে যাবে। যতই ভালো ব্যবহার করবে ততই খারাপ ব্যবহার পাবে। তুমি যেমন চাইবে তেমন পাবে না।


তোমার ছায়ায়-মায়ায়-ঠিকানায় শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রেমস্নাত অবন্তীকে লিখেছেন তার উপস্থিতির গুরুত্ব, ঘামগন্ধতার গুরুত্ব নিয়ে। লিখেছেন,

মন চায় তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যাই অজানায়, দূর দিকবলয়। বেলায়-অবেলায় দক্ষিণা পবনের দোলায় দোলায় হারিয়ে যেতে মন চায় দূর সীমানায়।


কারও চোখের জলের কারণ হতে নেই শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর হৃদয়মোহনবিলাস অবন্তীকে লিখেছেন চোখের জলের মূল্য, চোখের জলের কারণ নিয়ে, কারণবিহীন চোখের জলের কারণ ও কারণযুক্ত চোখের জলের মাহাত্ম্য নিয়ে। লিখেছেন,

সুখী মানুষ তো সেই যে কাঁদতে জানে, কান্না করতে জানা মানুষ ভালো পার্টনারও হয়। চোখের জলে হৃদয় গলে।


চুপ থাকা কঠিন একটি গুণ শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর মনমুগ্ধপদ্ম অবন্তীকে লিখেছেন চুপ থাকা নিয়ে, চুপ থাকলে সমস্যার অর্ধেক সমাধান নিয়ে। লিখেছেন,

জীবনে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়; সুখও নয়, দুঃখও নয়, সুসময়ও নয়, দুঃসময়ও নয়। শুধু শান্ত থাকো, নীরবে কান্না করো আর চুপ থাকো।


পর মানুষ পরই, আপন মানুষ স্বার্থপর শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রিয়ভাজন অবন্তীকে লিখেছেন আপন মানুষের স্বরূপ ও পর মানুষের দ্বিচারণ নিয়ে। লিখেছেন,

শতভাগ আপন তোমার আমি হতে না পারলেও শতভাগ পর কখনোই আমি তোমার নই।


আশা পূরণ হবে সেই আশায় থাকতে নেই শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর হৃদয়সখা অবন্তীকে লিখেছেন আশাবাদী, নিরাশাবাদী ও হতাশাবাদী মানুষদের নিয়ে। লিখেছেন,

হতাশাবাদীরা আশা করলেও হতাশাকেই আঁকড়ে থাকে। নৈরাশা একটি মানসিক রোগ। আশার আলো তাদের আলোকিত করতে পারে না।


হেরে থাকো ভালোবাসার মানুষের কাছে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর শুভশংসাকারী অবন্তীকে লিখেছেন ভালোবাসার মধুরতা ও তিক্ততা নিয়ে। লিখেছেন,

সঙ্গীকে সুখী রাখবো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ভালোবাসা উচিত। ভালোবাসার মানুষ প্রত্যাশা পূরণ করবে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ভালোবাসা উচিত না।


আমি আছি, একা হতে পারবে না শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রিয়জন অবন্তীকে লিখেছেন একা থাকা নিয়ে, একাকিত্ব নিয়ে, একা থাকার জ্বালা ও উপভোগ নিয়ে। লিখেছেন,

সুন্দর সম্পর্কের মধ্যে থাকলে মন ভালো হবে এমন নয়, নিজের সাথে নিজের সম্পর্কটাই আসল সম্পর্ক, বাকি সম্পর্ক সব অভিনয়।


তোমার উপর সর্বদা মগ্ন, নিমগ্ন শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর শুভপ্রত্যাশাকারী অবন্তীকে লিখেছেন একান্ত অবন্তীর জন্য কিছু কথা, তার উপস্থিতি-অনুপস্থিতিতে আনন্দ-বেদনার কথা। লিখেছেন,

জানি হৃদয় তোমার শুদ্ধ, পরিশুদ্ধ। তোমার উপর আমি সর্বদা মগ্ন, নিমগ্ন।জীবনকে দুইজনে মিলে করবো ভোগ, উপভোগ।


সুন্দর মনই মুগ্ধতা ছড়ায় বেশি শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রিয়সাথি অবন্তীকে লিখেছেন প্রিয় মানুষের রূপে মুগ্ধতা, গুণে মুগ্ধতা ও সুন্দর মনের মুগ্ধতা নিয়ে। লিখেছেন,

শুধু সুন্দর মুখশ্রীই মুগ্ধ করতে পারে না, মুখের সুন্দর কথায় মুগ্ধতা ছড়ায়। সুন্দর ব্যক্তিত্ব মুগ্ধতা ছড়ায়, সুন্দর কথার ধরন মুগ্ধতা ছড়ায়, সুন্দর কাজ-কর্ম মুগ্ধতা ছড়ায়।


আঘাত পেলেও আঘাত দেবে না কাউকে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর অনিন্দ্যবন্ধু অবন্তীকে শারীরিক আঘাত, মানসিক আঘাত, প্রতিঘাত সম্বন্ধে লিথেছেন। লিখেছেন,

একটি সুস্থ মন কখনোই কাউকে আঘাত করে না। বিশ্বাসঘাতকরা আঘাত দেওয়া ছাড়া বোঝে না কিছু, বিশ্বাসপ্রবণ মন আঘাত দেওয়া কী জানেই না।


দুজন দুজনের সুজন, দুর্জন দূরে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর জনমসাথি অবন্তীকে লিখেছেন দুজনের বন্ধন, সুজন, দুর্জন, সম্পর্কের আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে। লিখেছেন,

দুজন দুজনের হলে সুজন, স্বজন; দুর্জনের দুরাচার থেকে থাকবো সুরক্ষিত।


ভালো থাকা নিজের কাছে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর সুস্বাস্থ্যকামী অবন্তীকে লিখেছেন ভালো থাকার সূত্র নিয়ে, আত্মবিশ্বাসী, আত্মবিশ্লেষণ, আত্মতুষ্টির মতো বিষয় নিয়ে। লিখেছেন,

নিজেকে জানলে নিজের দুঃখ থাকে না। অন্যকে জানতে গিয়ে বড়ো ভুল করে বসি। অন্যকে জানতে গিয়ে নিজেকে জানার চেষ্টা করি না, আর তাই আমাদের ভেতর হিংসা জাগে।


দেবী তুমি আমার হৃদয়বেদিতে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রাণপতি অবন্তীকে লিখেছেন পৌরাণিক বিভিন্ন দেবীদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে, সেইসব দেবীদের মতো চরিত্রসম্পন্ন হতে লিখেছেন। লিখেছেন,

রামের স্ত্রী সীতার মতো অগ্নিপরীক্ষা দিতে পারবে না, পারবে না তাঁর মতো ত্যাগ স্বীকার করতে; কিন্তু তাঁর মতো লোকনিন্দা সহ্য করা শিখবে, হবে তাঁর মতো বিশুদ্ধতার প্রতীক।


তোমার কারণে সুখের রঙে রাঙি শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর মনের মানুষ অবন্তীকে লিখেছেন জীবনের রং, রংহীন জীবন, জীবনের ধূরসতা, জীবনের স্বর্ণাভা নিয়ে। লিখেছেন,

রংচটা জীবনেও রং লাগে জীবনকে বুঝতে জানলে। রংহীন মনেও রং লাগে মনে সবসময় বসন্ত রাখতে জানলে।


ভয় ছায়ার মতো সাথে থাকে শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর প্রিয়সখা অবন্তীকে লিখেছেন ভয় নিয়ে, ভয়ের ধরন নিয়ে, আত্মবল নিয়ে, ভয়হীনতা নিয়ে। লিখেছেন,

চিন্তা করলে ভয় কাটে না, ভয় কাটে কাজ করলে। ভয়হীন হওয়ার জন্য আত্মবল দরকার। আত্মবল আসে অর্থ রোজগার করলেই।


তোমার ভালো চাই, তাই দিই উপদেশ শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর চিরসহচর অবন্তীকে লিখেছেন কথা রাখা, বিশ্বাস রাখা, জীবনাচার নিয়ে। লিখেছেন,

যে-কাউকেই সমীহ করবে না। দেখো, বয়স দেখে সম্মান করতে নেই, আচরণ দেখে সম্মান করতে হয়।


কবিতা বাস্তবতার ব্যবচ্ছেদ শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর মনোকবি অবন্তীকে লিখেছেন কবিতা সম্বন্ধে। লিখেছেন,

মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, অভাব-অভিযোগ, স্বপ্ন ও বাস্তবতার বুদ্ধিবৃত্তিক ও মননশীল প্রতিফলন হলো কবিতা।


তাজাফুল তারাফুলে সাজাবো তোমায় শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর মনমাধব অবন্তীকে বিভিন্ন ফুলের উপমায় সাজিয়ে লিখেছেন। লিখেছেন,

কাঁটাযুক্ত গাছে উঠে কষ্ট করে শিমুল ফুল পেড়ে এনে দিতে না পারলে যদি দিই ছিঁড়ে পথের ধারের অযত্নে-অবহেলায় ফুটে থাকা ভাঁটফুল, নিও।


তুমি বিরল প্রকৃতির, সর্বাবস্থায় শান্ত থাকো শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রেমস্নিগ্ধ অবন্তীকে লিখেছেন জীবন-বাস্তবতার কিছু কথা। লিখেছেন,

জীবনে পরগাছা নামক অপ্রয়োজনীয় মানুষকে ছেঁটে ফেলতে হয়, চারপাশে আগাছা বাড়তে দিলে নিজের বাঁচা মুশকিল হয়ে যায়।


কষ্ট দেওয়া জীবনের ব্রত হওয়া ঠিক না শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর প্রিয়বন্ধু অবন্তীকে জীবনে কোন্ বিষয় ঠিক, কোন্ বিষয় ঠিক নয় তা নিয়ে লিখেছেন। লিখেছেন,

কাউকে অনুভবে রাখা ঠিক, কিন্তু তার জন্য নিজস্বতা বিসর্জন দেওয়া ঠিক না। প্রত্যাশা করা ঠিক, উচ্চাশা করা ঠিক না।


এখন কেউ প্রশংসা করে লোভে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রাণকান্ত অবন্তীকে লিখেছেন এখন মানুষ কী করে বেশি আর কী বলে বেশি তা নিয়ে। লিখেছেন,

ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেশি, আত্মতৃপ্ত মানুষ নেই। খোশ মেজাজের মানুষ নেই, নাখোশ মানুষের সংখ্যা বেশি।


কতদিন তোমার মুখের হাসি দেখি না শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর মনকাতর অবন্তীকে লিখেছেন প্রিয় মানুষের অনুপস্থিতিতে হৃদয়ের আকুলভরা কথা। লিখেছেন,

কতদিন তোমার পায়ের নূপুরের রিনিঝিনি শব্দ শুনি না, তোমার পায়ের শব্দেই আমি তোমাকে চিনে নিই।


তুমি দেখতে বিনা সাজেই অপূর্ব শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর সাজদর্শক অবন্তীকে লিখেছেন সাজগোজের বিভিন্ন বিষয়ে। লিখেছেন,

পার্টি লুকের জন্য চোখে দিও গ্লিটার, জমকালো আয়োজনে যেতে শিমার আই মেকআপ করে নিও। আইব্রো ঘন করতে নিয়মিত মেথি দিও।


তোমাকেই পড়ি, তুমি আমার উপন্যাস শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর বিহঙ্গবন্ধু অবন্তীকে লিখেছেন উপন্যাস পড়ে উপন্যাসের কাহিনি সংক্ষেপ। লিখেছেন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘরে বাইরে, যোগাযোগ, শেষের কবিতা, চোখের বালি; বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কৃষ্ণকান্তের উইল; শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রহীন উপন্যাসের পাঠোদ্ধার।


চিঠি দিও, চিঠিতে মন পাঠিও শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর বিতৃষ্ণাজাগরূক অবন্তীকে লিখেছেন চিঠি না দেওয়ার আক্ষেপ নিয়ে, চিঠিতে কী কী লিখবে তা নিয়ে। লিখেছেন,

লিখতে গিয়ে ভুল হলে ভুল চিঠিই দিও, কাটাকাটি হলে পৃষ্ঠা পরিবর্তনের দরকার নেই, অযত্নেই চিঠি দিও; মন ভরে পড়বো।


তুমিহীন আমি আমিহীন শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর সুস্বাস্থ্যপ্রার্থী অবন্তীকে লিখেছেন প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে ও সংস্পর্শে শুদ্ধ হওয়ার বিষয় নিয়ে। লিখেছেন,

তোমার ব্যক্তিত্বে ছিলো নমনীয়তা, কোমনীয়তা, শুদ্ধতা। আমি তোমার ব্যক্তিত্বে হয়েছি মুগ্ধ, ব্যক্তিত্বই পারে মুগ্ধ করতে আর কিছু না।


বাগধারায় দেখতে পাওয়া পৌরাণিক চরিত্র শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর সুহৃদ অবন্তীকে লিখেছেন বাগধারায় দেখতে পাওয়া বিভিন্ন পৌরাণিক চরিত্র নিয়ে। লিখেছেন,

দুর্যোধনের দেওয়া রাজকীয় ভোগ প্রত্যাখ্যান করে শ্রীকৃষ্ণ বিদুরের দেওয়া সামান্য তণ্ডুলকণা গ্রহণ করেছিলেন বলে 'বিদুরের খুদ' মানে শ্রদ্ধার সামান্য উপহার।


অল্পায়তন আদর্শ অণুগল্পের গুণ শিরোনামে লেখা অবন্তীর বান্ধব অবন্তীকে লিখেছেন অণুগল্পের আকার, ধরন, চরিত্র, রহস্য নিয়ে। লিখেছেন,

চরিত্রের বিশ্লেষণত্ব অণুগল্পের ময়লা। গল্পের স্বল্পায়তন রূপ অণুগল্প, যেখানে রহস্যময়তা বিদ্যমান; দুর্বোধ্যতা দূরান্বিত।


তোমার আসক্তিতে সবসময় আসক্ত শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর জীবনসাথি অবন্তীকে লিখেছেন প্রিয় মানুষের বিহনে হৃদয়ের আকুলতা, ব্যাকুলতার কথা। লিখেছেন,

প্রতিটি মুহূর্ত কাটে প্রথম দেখা মুহূর্তের মতো। তোমার উপস্থিতিতে আমার কল্পনা বাস্তবতা পেয়েছে। আমার শীতল ভাব পেয়েছে উষ্ণতা।


তোমাতেই আমার দিন শেষের বিশ্রাম শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর কান্তিমান পুরুষ অবন্তীকে লিখেছেন প্রিয় মানুষের প্রতি মায়া, প্রিয় মানুষের প্রতি স্নিগ্ধতা, মুগ্ধতা নিয়ে। লিখেছেন,

হেম অগ্নির মতো পবিত্র তুমি, শান্ত তুমি সৌম্য নদীর মতো; ভালোবাসার শব্দার্থ তুমি, সুখের প্রতিশব্দ তুমি, শান্তির তুমি সমার্থক।


ভেতরের রূপকে মানুষ প্রকাশ করে না শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রাণপুরুষ অবন্তীকে মানুষের দ্বিচারিতা, দ্বিমুখী আচরণের কথা লিখেছেন। লিখেছেন,

নিজের স্ত্রীকে মারতে দ্বিধা করি না, সেখানে টেলিভিশনের পর্দায় বাঘ হরিণ ধরলে বাঘকে গালি দিতে থাকি।


মসলায় স্বাদ হয়, গুণ জানি না শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর মনবন্ধু অবন্তীকে লিখেছেন বিভিন্ন মসলার গুণাগুণ নিয়ে। লিখেছেন,

জাফরান জল ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। লবঙ্গ খেলে ঠাণ্ডা লাগা, অ্যাজমা, সর্দি, কফ, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় উপকার হয়।


তুমি রাগ করো অনুরাগের জন্য শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রাণপ্রিয় অবন্তীকে লিখেছেন রাগ-অনুরাগ, বিরাগ, জেদ নিয়ে। লিখেছেন,

তুমি রাগ করলে জিতে যাও, তুমি রাগ করলে আমি হেরে যাই, হেরে থাকি। তোমার রাগ ভেঙে গেলে তোমাকে পাই আমি নতুন করে নতুন রূপে; ঠিক যেন নতুন ফুলের গন্ধ।


অনুভবের মানুষকে প্রাণ দিতে হয় শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর সুহৃদ্বর অবন্তীকে লিখেছেন জীবনের জন্য সত্য কিছু কথা। লিখেছেন,

মানুষের মনের ভাষা চোখে থাকে। চোখের তারায় তাকালে বোঝা যায় তোমার চোখ আমায় দেখলে কত বেশি প্রশান্ত হয়ে উঠে।


জীবনের গল্প গল্প নয়, উপন্যাস শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর হিতকামী অবন্তীকে উপন্যাসের গঠন, কাহিনি, ঘটনা, চরিত্র, বর্ণনাভঙ্গি লিখেছেন। লিখেছেন,

জীবনের বাস্তব সমস্যা ও নর-নারীর মনস্তাত্ত্বিক সংকটের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ শিল্প প্রতিভায় উপস্থাপিত হয় উপন্যাসে।


মানুষ সত্য ভুলে শক্তির পক্ষে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রাণনাথ অবন্তীকে মানুষের রূপ, মানুষের ভেতর-বাইর নিয়ে লিখেছেন। লিখেছেন,

সবাই কাছে এসে প্রিয় সাজবে, কিন্তু প্রিয় না অপ্রিয় হয়ে দূর থেকে অভিশাপ দেবে। তোমার প্রশংসা করতে কেউ হয়তো কৃপণতা করবে না, কিন্তু তোমার অবর্তমানে তোমাকেই হিংসা করবে।


কথার কারণেই উত্থান ও পতন শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর সহচর অবন্তীকে লিখেছেন কথার কারুকাজ, কথার শক্তি, কথার গুরুত্ব, কথার ক্ষতিকর দিক নিয়ে। লিখেছেন,

মিথ্যা কথা বলে মিথ্যাকে ঢাকা যায় না, মিথ্যা ভেসে যায় খড়কুটোর মতো, সত্য উদিত হয় সূর্যের মতো তেজে। মিথ্যা কথা বলে শান্তিতে থাকা যায় না।


আদরে হৃদয় গলে, গলে পাথরও শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর শুভচিন্তাকারী অবন্তীকে লিখেছেন আদরের মাহাত্ম্য নিয়ে, আদরের গুরুত্ব নিয়ে। লিখেছেন,

আদর দিয়ে বন্ধন বাড়ে, আদর দিলে নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, আদর দিতে জানলে যে কারোর মনের গহীনে প্রবেশ করতে পারবে। আদর দিয়ে আগলে রাখা হৃদয় অনুভূতি দিয়ে ঠাসা।


নাটক জীবন চালচিত্রের দর্পণ শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রাণেশ্বর অবন্তীকে লিখেছেন নাটক নিয়ে, নাটক কী, নাটকের বৈশিষ্ট্য, শৈল্পিক গুণাবলি নিয়ে। লিখেছেন,

নাটক মিশ্রকলা, কারণ যেমন পাঠ্য তেমন অভিনয়ও বটে। অর্থাৎ নাটক একই সঙ্গে দেখা ও শোনার বিষয়। দর্শন ও শ্রবণ-ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বলে নাটককে দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্য বলা হয়।


নিজেকে উজাড় করলে কেউ শূন্য হয় না শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর শুভচিন্তক অবন্তীকে লিখেছেন বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে, জীবন চলার পথের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে, বিভিন্ন সচেতনামূলক কথা নিয়ে। লিখেছেন,

নিজেকে উজাড় করে দিলে কেউ শূন্য হয় না। সবাইকে আপন করে নিতে চেষ্টা করবে। ভালোবাসাহীন জীবন আবর্জনার মতো অর্থহীন। ভালোবাসায় জীবন হয় রঙিন।


যোগ-বিয়োগের জীবনে শুধুই তুমি বিয়োগ শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর বিতৃষ্ণার পাত্র অবন্তীকে নিষ্ঠুর বলে বিভিন্ন কথা লিখেছেন। লিখেছেন,

তোমার বন্ধুত্বে ছিলো স্বার্থ, আজ বুঝেছি ক্ষণিকের জন্য হাত ধরার লোক অনেকেই হয়, হাত ধরে থেকে যাওয়ার মানুষ খুবই কম হয়।


স্মৃতির পাতা ঝরে যায় না শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর স্মৃতিকাতর অবন্তীকে লিখেছেন স্মৃতি নিয়ে, অতীত স্মৃতির মিষ্টতা ও তিক্ততা নিয়ে। লিখেছেন,

তুমি ছাড়া জীবন ছিলো স্বাদহীন, এখন তোমার স্মৃতিহীন আমি আমিহীন। তোমার দেওয়া সময়টুকু এই জীবনে ক্ষণিকের, কিন্তু সেই ক্ষণকালের স্মৃতিটুকুই জীবনে দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেলো।


অবহেলার ব্যথা লাগে মনে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর চক্ষুশূল অবন্তীকে লিখেছেন অবহেলা নিয়ে, অবহেলার কষ্ট নিয়ে, অবহেলায় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে। লিখেছেন,

অবহেলিত না হলে বোঝা যায় না অবহেলার জ্বালা কত বেশি সাংঘাতিক। এতবেশি অবহেলা করেছো যে তোমাকে ছাড়া এখন আমি দিব্যি পথ চলতে পারি, সময় কাটাতে পারি, রাতে ঘুমাতে পারি।


কাউকেই সহজে বিশ্বাস করা ঠিক না শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর ঘৃণার্হ অবন্তীকে লিখেছেন জীবনের সহজতা নিয়ে, সহজ কথা নিয়ে, সহজ কথার দুর্বোধ্যতা নিয়ে। লিখেছেন,

সহজে যে দুঃখ দেওয়া যায়, সহজে যে কষ্ট দেওয়া যায় তুমি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। খুব সহজে আমাকে তোমার কাছাকাছি করেছিলে, আবার খুব সহজেই দূরের করে দিয়েছো।


তোমার হাসি সূর্যাস্তের একফালি সোনালু রোদ শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রাণময় অবন্তীকে নিয়ে লিখেছেন, অবন্তীর জীবনজুড়ে প্রয়োজন বিষয়ে লিখেছেন। লিখেছেন,

তোমার হাসি সূর্যাস্তের একফালি সোনালু রোদ, যাতে আমার যাবতীয় বিষণ্নতা নিভে যায়। তোমার সামনে বৃষ্টিভেজা পানকৌড়ির মতো জুবুথুবু হয়ে যাই আমি, কথারা পর্যন্ত হারিয়ে যায়।


তুমি অনুভবের মলাটে রেখো আমায় শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রাণেশ্বর অবন্তীকে নিয়ে লিখেছেন, অবন্তীর ভালোবাসা, অবন্তীর অভিমান, অনুযোগ নিয়ে লিখেছেন। লিখেছেন,

বোঝো আমায় তুমি, অনুভবের মলাটে রাখো, তবুও তোমার অনুপস্থিতি হৃদয়ে আগুনের জ্বলা দেয়। তুমি আমার আকাঙ্ক্ষা, আকাঙ্ক্ষায় বেঁচে থাকার কারণ।


ভালোবাসা পেতে যোগ্যতা লাগে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর চোখের বালি অবন্তীকে লিখেছেন অবন্তীর পাষাণতা নিয়ে, অবন্তীর অন্য এক রূপ নিয়ে, অবন্তীর দ্বিচারণ রূপ নিয়ে। লিখেছেন,

যে যাকে মায়ায় জড়ায় তাকে ছাড়া থাকতে পারে না। যাকে ভালোবাসো তার জন্য মনের মধ্যে অস্থিরতা থাকে। সেই অস্থিরতা কীভাবে সামলাও!


সবাই ব্যথা দেয়, ব্যথা বোঝে না শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর প্রেমদগ্ধ অবন্তীকে লিখেছেন ব্যথা নিয়ে, ব্যথা দেওয়ার কারণ নিয়ে, অকারণ ব্যথা দেওয়ার কারণ নিয়ে। লিখেছেন,

ব্যথা দেওয়ার মানুষ সমাজে অঢেল, ব্যথা বোঝার মানুষ সমাজে নেই। কিছু মানুষ জীবনে আসে শুধু ব্যথা দিতে, সময় কাটাতে।


তুমি ছিলে তোমার প্রয়োজনে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর উপেক্ষিত অবন্তীকে লিখেছেন অবন্তীর চলে যাওয়া নিয়ে, অবন্তীর অনুপস্থিতি নিয়ে, বিহনে ব্যথা-বেদনা-ক্ষোভ নিয়ে। লিখেছেন,

তুমি কপালে ছিলে না, তাই সারাজীবন হৃদয়েই থেকে গেলে। তোমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকি, তুমি বিরক্তির ভয়ে সেই পথই বদলে ফেলেছো।


আমার অস্তিত্বের ভূ-ভাগে তোমার আধিপত্য শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর প্রাণেশ অবন্তীকে লিখেছেন অবন্তীকে পাওয়ার আনন্দে আনন্দময় কথা। লিখেছেন,

অদম্য তৃষ্ণায় তুমি, বিমূর্ত ভাবনায় তুমি, তুমি অমৃত প্রশান্তি। হৃদয় কোণে তুমি, তুমি প্রত্যয়ী চিন্তায়, তুমি স্তব্ধ চৌকাঠে সুখধারা।


তোমার কারণে আজ আমি দুঃখবিলাসী শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর দুশমন অবন্তীকে লিখেছেন অবন্তীর চলে যাওয়া নিয়ে। অবন্তীর বিহনে অবন্তীর প্রিয়জন অবন্তীকে লিখেছেন,

সাতরঙা সুখ দেবে বলে জীবনে এসে হয়ে গেলে জীবনের কালো অধ্যায়। কষ্টের সারসংক্ষেপ হলে, দিলে এক বুক ব্যথা, প্লাবনস্রোতে ভেসে গেলো আনন্দ নিকেতন।


শরতের রং তুমি, তোমার রং মাখি আমি শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর প্রেম-প্রীতিভাজন অবন্তীকে লিখেছেন অপূর্ব ঋতু শরৎ নিয়ে, শরতের রূপ, শরৎকালের প্রকৃতির বৈচিত্র্যময়তা নিয়ে। লিখেছেন,

প্রকৃতিতে শরৎ দিয়েছে নির্মল আকাশ, হৃদয়ে দিয়েছো তুমি ধূসর ও পাণ্ডুর ক্ষণ। শরতের সকাল সবাইকে দিয়েছে অভূতপূর্ব আনন্দ-অনুভূতি, আমার সকাল বর্ণহীন ও বিদীর্ণ।


তোমার ভুল তোমার কাছে সঠিক মনে হয় শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর প্রণয় ও প্রত্যয়প্রার্থী অবন্তীকে লিখেছেন মূল্যবান জ্ঞানকথা নিয়ে। লিখেছেন,

যাদের মুখে মিথ্যার বেসাতি থাকে, তাদের রূপ সৌন্দর্যের কী দাম! মানুষের যে-কোনো আচরণে খুব বেশি মন খারাপ করবে না।


কথার আঘাত সহ্য করা যায় না শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর সান্ত্বনাদানকারী অবন্তীকে লিখেছেন আঘাত পাওয়া নিয়ে, কিছু আঘাত বেত্রাঘাতের চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক তা নিয়ে। লিখেছেন,

কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখাও এক ধরনের আঘাত। কারও বিশ্বাস ভঙ্গ করাও আঘাত করার সামিল।


চিন্তাশীল কথা মনের সৌন্দর্য প্রকাশ করে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর নিন্দুক অবন্তীকে লিখেছেন অবন্তীর রূপচর্চা করা নিয়ে, রূপচর্চা করার কারণে কিছুটা ক্ষুব্ধতা নিয়ে। লিখেছেন,

চুল হলুদ করা গুরুত্বপূর্ণ, নাকি হলুদ বাথরুম পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ বুঝতে হবে।


সুন্দর রান্নায় হৃদয় পোড়ে শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর রান্নার ভক্ত অবন্তীকে লিখেছেন অবন্তীর রান্নার গুণ নিয়ে, রান্নায় পারঙ্গমতা নিয়ে, রান্নাকালীন কষ্ট নিয়ে। লিখেছেন,

অন্যকে খাওয়াতে যে আনন্দ পায়, রান্না তার কাছে আনন্দের ও উপভোগের। রান্না যতই সুন্দর ও স্বাদের হোক না কেনো পরিবেশন যদি গোমরা মুখে হয় সেটির স্বাদ থাকে না।


টিপ পরো তুমি মোলায়েম হাতে শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রেমাসক্ত অবন্তীকে লিখেছেন অবন্তীর টিপ পরা নিয়ে, টিপ পরলে যে সৌন্দর্য ফোটে তা নিয়ে। লিখেছেন,

তোমার কপালের লাল টিপের মায়ায় ভুলেছি, ও টিপে তাকালেই দেখি লাল জবা ফুল।


কত নামে ডাকো আমায়, অবন্তী শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর স্বপ্নসুষমা অবন্তীকে লিখেছেন অবন্তী তাকে কী কী নামে ডাকে তা নিয়ে। অবন্তীর প্রিয় মানুষটি কত কত মিষ্টি নামে ডাকে তা নিয়ে লিখেছেন তারই প্রিয় মানুষটি। লিখেছেন,

"যখন ডাকো কইগো বলে, বদ্ধ হৃদয়ও খোলে। যখন ডাকো বলে ওগো, সর্ব রোগ থেকে পাই আরোগ্য"।


কালো গোঁসাইয়ের মন কালো নয় শিরোনামে লেখা চিঠিতে অবন্তীর কালো গোঁসাই অবন্তীকে লিখেছেন নিজের কালোত্ব নিয়ে, কালো হওয়ার কারণে মন-মননের দুর্বলতা নিয়ে। লিখেছেন,

সবাই বর্ণবাদবিরোধী, কিন্তু কেউ কালো মানুষকে বরণ করি না। কালো মানুষের মধ্যেও বিশেষ কিছু থাকে, যা দেখেও কেউ দেখি না।


তুমি দেখো সিরিয়াল, আমি দেখি তোমায় শিরোনামের চিঠিতে অবন্তীর প্রণয়ভাজন অবন্তীকে লিখেছেন দুই হাজার চব্বিশ সালের অক্টোবর মাসের সময়কালে জি বাংলা ও স্টার জলসায় প্রচারিত সিরিয়ালের শ্রেষ্ঠাংশে যারা অভিনয় করেন তাদের প্রকৃত ও সিরিয়ালের নাম নিয়ে ও চলমান সময়ের কাহিনি সংক্ষেপ নিয়ে।

চিঠিতে থাকতো ব্যক্তিমানুষের প্রকাশ। মানুষ তার নিঃসঙ্গতা, অনুভূতি, মনোভাব অন্যের সঙ্গে বিনিময় করতে গিয়ে সচিত্র পত্র লিখতো। চোখে না দেখেও মাসের পরে মাস শুধু কাগজে লেখা অক্ষরেই বেঁচে থাকতো সম্পর্ক। পত্র ও প্রেমপত্রের যুগ শেষ। মানুষ এখন আর চিঠি লেখে না। এখন ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারের যুগ। চিঠির যুগ ফেলে ইলেকট্রনিক বার্তার যুগে মানুষ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যোগাযোগের অনেক সহজ ব্যবস্থা করে দিলেও চিঠির আবেদন ফুরিয়ে যাওয়ার নয়। চিঠি শুধুই একটি যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো না, বরং এটি ছিলো একটি শিল্প। সুন্দর হাতের লেখা, লেখনশৈলীতে পরিপূর্ণ একটি চিঠির গুরুত্ব হাজারটি ইলেকট্রনিক খুদে বার্তায় মিলবে না। মরিচায় ক্ষয়ে যাওয়া ডাকবাক্সে তামাটে রং ধরেছে, মরিচা ধরেছে আমাদের মনন ও সৃষ্টিশীলতায়ও। তবুও এই সময়ে এসে সৌমেন দেবনাথ চিঠিজনিত স্মৃতিকে সামনে এনেছেন ❝কালো গোঁসাইয়ের চিঠি❞ পত্রসাহিত্যের মাধ্যমে। পত্রসাহিত্যটি পড়ে আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিলাম। পাঠান্তে এটুকু বলা যায় পাঠসময় বৃথা যায়নি।

**********

কালো গোঁসাইয়ের চিঠি
সৌমেন দেবনাথ


প্রচ্ছদ: চাষী এস. কে. খান
মোট চিঠি: ৮৮টি
মোট পৃষ্ঠা: ৯৬টি
প্রথম প্রকাশ: নভেম্বর, ২০২৪

প্রকাশক: সবুজ হোসাইন


বিনিময় মূল্য: ২৫০ টাকা
আইএসবিএন: ৯৭৮-৯৮৪-৩৬-০৪৯৭-২

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ