'তারেও কেউ ভালোবাসে' কাব্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তরুণ কবি ফারিহা নূরের সাক্ষাৎকার

'তারেও কেউ ভালোবাসে' কাব্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তরুণ কবি ফারিহা নূরের সাক্ষাৎকার


ফারিহা নূরের জন্ম ৩১ অক্টোবর পটুয়াখালী জেলায়৷ বেড়ে ওঠা ও বর্তমান নিবাস ঢাকায়৷ তিনি প্রকৃতির মতোই রহস্যময়ী, প্রকৃতির সুধামাখা প্রেমসঞ্চয়ী। প্রকৃতির সরলতায় ডুবে আত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করেন নিবিড় আলিঙ্গনে।

শৈশব থেকেই তিনি বই পড়তে ভালোবাসেন। নিজেকে যুক্ত রাখেন সৃজনশীল কাজে। ইতোমধ্যে তার তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যা পাঠক হৃদয়ে দিয়েছে সুখের অনুরণন। ২০২৪ সালে পেয়েছেন ‘ধ্রুপদী সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩-২০২৪’ এবং ওমেন্স ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক প্রবর্তিত ‘ওমেন্স গ্র্যান্ড পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড- ২০২৪’।


❑  সম্প্রতি আপনার তৃতীয় কবিতার বই ‘তারেও কেউ ভালোবাসে’ প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷

ফারিহা নূর: অসাধারণ অনুভূতি। পাঠক থেকে ধীরে ধীরে লেখক হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা। এই যেমন ধরুন, অর্জিত শিক্ষার সাথে সৃজনীশক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। এটা অবশ্যই খুবই চমৎকার অনুভূতি।

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

ফারিহা নূর: লেখাগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল, মনে হল সংরক্ষণ করা জরুরী। শুধুমাত্র নিজের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইনি। কবিতাপ্রেমী পাঠকের হৃদয়েও লেখাগুলো সংরক্ষণের ইচ্ছা থেকেই বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম।

❑  আপনি কি মনে করেন আপনার লেখা সর্বস্তরের পাঠককে মুগ্ধ করতে সক্ষম?

ফারিহা নূর: লেখার সকল ধারায় প্রবেশ করেও অনেক সময় সর্বস্তরের পাঠককে মুগ্ধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কবিতা দিয়ে সর্বস্তরের পাঠকের কাছে পৌঁছানো যায় না। তবে সকল লেখারই পাঠক রয়েছে। বিশেষ শ্রেণীর পাঠকের জন্য বিশেষ শ্রেণীর লেখকও রয়েছে। আমার লেখাও শ্রেণীবিশেষে জায়গা করে নিয়েছে। তাছাড়া সর্বস্তরের পাঠককে মুগ্ধ করা একজন লেখকের কাজ না।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

ফারিহা নূর: আত্মবিশ্বাস আসে গ্রহণযোগ্যতা থেকে; লেখাটি যখন নিজের কাছে এবং পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় তখন আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ হয়।

❑  কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।

ফারিহা নূর: কবিতার সজীবতা, গতিময়তা, ছন্দের সাথে আমার ভাব প্রকাশের ভাব জমেছিল। তাই কবিতাই হলো ভাব প্রকাশের মাধ্যম।

❑  ভবিষ্যতে কবিতা ছাড়া অন্যকিছু লেখার পরিকল্পনা আছে?

ফারিহা নূর: বর্তমানে যারা লিখছেন তারা তো আসলে অনেক কারণেই লিখছেন, তবে আমি লিখছি মনের তাগিদে। লেখার ক্ষেত্রে মনের উপর কখনোই জোর খাটাতে চাইনি। এটা খুব সুন্দর বিষয় যে সাহিত্যের প্রত্যেকটি শাখাই বেশ সমৃদ্ধ। কখনো যদি সাহিত্যের অন্যান্য ধারায় লিখতে আগ্রহ বোধ করি তবে মনের তাগিদে অবশ্যই লিখব।

❑  অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

ফারিহা নূর: বিশেষ লেখায় অবশ্যই বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন। যেমন নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক কোন লেখা। তবে আমার কবিতার ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা, আমি কবিতাকে কখনোই নির্দিষ্ট সীমায় আটকে রাখতে পারিনি। কখনো আমার বিপুল আগ্রহ থেকে আমি কবিতা লিখতে বসে গেছি, আবার কিছু সময় কবিতা নিজেই আমাকে ডেকে নিয়েছে তার কাছে। তাই সেক্ষেত্রে প্রস্তুতিটা সবসময় সব লেখার জন্য একই রকম হয় না।

❑  পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

ফারিহা নূর: মনোযোগ, সময়, নির্ভুলতা এবং লেখাটি যাতে করে সর্বসাধারণের পাঠ উপযোগী হয় তার সহজবোধ্যতা।  

❑  শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

ফারিহা নূর: শিল্পের শৈল্পিক প্রয়োগের মাধ্যমেই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে চাই। আর প্রথমত দায়বদ্ধতা নিজের কাছে। আমার লেখা আমাকে আনন্দিত, আন্দোলিত, ভাবুক কিংবা বিষাদে জর্জরিত করতে না পারলে তা পাঠককে স্পর্শ করবে কী করে! সর্বোপরি আমি নিজেও একজন সচেতন পাঠক।

❑  একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

ফারিহা নূর: পাঠক হিসেবে বইটি পড়তে যেয়ে মনে হয়েছে সহজ কথায় অনুভূতির অনেক গাঢ় রঙ নিয়ে খেলা হয়েছে। তবে নিজের লেখা যতবার পড়তে যাই ততবারই নতুন রূপে পাঠক হয়ে উঠি। লেখাকে ভাঙচুর করে রঙ-রসে রাঙিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির নেশায় আরো ডুবে যাই।

❑  অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

ফারিহা নূর: বইমেলায় বই প্রকাশের আগ্রহ থাকাটা দোষের কিছু নয় বরং আনন্দের। তবে মেলায় বই প্রকাশ করতেই হবে এমন তাগিদ থেকে লেখায় তাড়াহুড়ো অনেক সময় লেখার মান কমিয়ে দিতে পারে, বইয়ে ভুলের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে বইটি পড়ার অনুপযোগী হতে পারে। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে বইয়ের কাজ শুরু করা উচিত।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ